ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরীর দুই তীরে সবজি চাষে বাম্পার ফলন

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া ::

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং গেল বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রায় দেড়মাস আগেই চাষিরা শীতকালীন আগাম সবজি চাষে নেমে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ।

আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি বছরে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৮ হাজারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে নানা ধরণের সবজি। এতেই হাজার হাজার প্রান্তিক চাষিরা শীতকালীন রকমারী সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, চলতি বছর বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ধকল না পড়ায় চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে প্রায় দেড়মাস আগে থেকেই নানা সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুর–মানিকপুর, চিরিংগাসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার কৃষককে। বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ বিভিন্ন শীতকালীন আগাম সবজির চাষাবাদ করে ক্ষেত থেকে প্রান্তিক এসব কৃষক এখন ফলন তুলে বিকিকিনিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বারো মাস জুড়ে এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির আশীর্বাদ এবং তীরের উর্বর মাটির ক্ষেতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারী ফসল উৎপাদন করে আসছেন। এবারও শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ব্যাপক সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এর সুফল ভোক্তা পর্যায়েও ছড়াবে। চকরিয়ায় চলতি মৌসুমে শীতকালীন এবারে ৪৮২ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ৪৪৮ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ৬২৪ হেক্টর জমিতে দেশি আলু, ১৪১ হেক্টার জমিতে মিষ্টি আলু, ২২৬ হেক্টর জমিতে টমেটো, ৬২৬ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে।এ ছাড়াও নানা রকমারি শীতের সবজি চাষাবাদ করেছে চাষিরা।

সরেজমিন মাতামুহুরী নদীর তীর ও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকেই চোখ যায় দেখা মিলবে সবুজের। এই সবুজেই আচ্ছাদিত হয়ে আছে নদীর দুইতীর।

কৃষকেরা জানান, আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে বেগুন, মরিচ, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার চাষ করা হয়। ইতিমধ্যে চাষিরা ক্ষেত থেকে উৎপাদিত সবজি ব্যাপক হারে বাজারে যাচ্ছে। আগামী একমাসের মধ্যে রকমারী সবজির আবাদ করা হবে। উপরোক্ত সবজি ছাড়াও গাঁজর, শিম, লাউ, বরবটি, ঢ়েঁড়স, করলা, তিত করলা, লালশাক, পুইঁশাক, ধনিয়া পাতাসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে উঠছে নদীর বিস্তীর্ণজোড়া তীর।

উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীতীরের কইন্যারকুম এলাকার কৃষক মো.দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিবছর মাতামুহুরী নদীর তীরের প্রায় দুই কানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এ বছরেও ওই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম মরিচ, টমেটোসহ নানা সবজি চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে প্রায় দেড়মাস আগে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। ইতিমধ্যে খেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে নেমে অন্য বছরের চাইতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা বেশি আয় হবে এমনটাই জানালেন তিনি।

চকরিয়া পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের আমাইন্যার চর এলাকার কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর তিন কানি জমিতে বাঁধাকপি ও মরিচ চাষ করেছি। প্রতি কানি বাঁধাকপি চাষ করতে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা খরচই তুলতে পারিনি।

পৌরসভার হালকাকারা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ন্যায্য মূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্ব ভোগীরা লাভবান হচ্ছে। তারা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে সবজি নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। আমাদের চেয়ে তারা বেশি লাভবান হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বন্যা না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষ। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার কৃষক সবজি চাষে মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে চাষিরা ক্ষেত থেকে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, চাষিরা প্রতিবারের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হয় কৃষকদের।

তবে প্রথম দিকে যারা ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে পেরেছেন তারাই লাভবান হয়েছেন। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সবজি ওঠায় বর্তমানে সবজির কিছুটা দাম কমে গেছে। তিনি বলেন, চকরিয়ায় চাষিদের জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্য কোল্ডস্টোর রাখার ও স্থাপনের বিষয়টি পরিকল্পনা রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি কোল্ডস্টোর স্থাপন বিষয়টি নিয়ে আলাপ করা হবে বলেও তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: